জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ

অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ (Morphological Evidences):

অঙ্গসংস্থান (morphology) জীববিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যাতে জীবের গঠন ও আকৃতি (বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ) সম্বন্ধে আলোচিত হয়। বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর বাহ্যিক ও অন্তর্গঠন পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট মনে হবে নিম্নশ্রেণির প্রাণী থেকে উচ্চশ্রেণির প্রাণিদেহে অঙ্গসংস্থানজনিত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণকে নিম্নোক্ত কয়েকটি শিরোনামে আলোচনা করা যায়।

ক. তুলনামূলক শারীরস্থান (Comparative Anatomy):
মেরুদন্ডী প্রাণিদের হৃৎপিন্ডের প্রকোষ্ঠ : বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীর হৃৎপিন্ডের গঠনের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায়, মাছে দুইপ্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড উিভচরে তিন প্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট, সরিসৃপে আংশিক চারপ্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট হলেও পাখি ও স্তন্যপায়ীতে সম্পূর্ণ চারপ্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট হৃৎপিন্ড বিদ্যমান।

মেরুদন্ডী প্রাণীদের মস্তিষ্ক : বিভিন্ন শ্রেণির মেরুদন্ডী প্রাণীর মস্তিষ্কের গঠন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মাছ থেকে শুরু করে স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্ক পাঁচটি ভাগে বিভক্ত । বিবর্তনের সোপানে যতই উপর দিকে উঠা যায়, ততই অপেক্ষাকৃত সরল গঠনের মূল কাঠামোটির ক্রমিক জটিলতা দেখা যায়, বিশেষ করে সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার (cerebral hemisphere) এবং সেরেবেলাম (cerebellum)-এর।

খ. সমসংস্থ অঙ্গ (Homologous Organs)

বিভিন্ন প্রাণীর যে সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উৎপত্তি-র দিক থেকে সদৃশ্য তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে তিমির অগ্রপদ, বাদুর ও পাখির ডানা, কুকুরের অগ্রপদ মানুষের হাত আপাতঃদৃষ্টিতে একে অপর থেকে ভিন্ন বলে মনে হয়। কিন্তু এদের পরীক্ষা করলে একই রকমের মৌলিক কাঠামো পরিলক্ষিত হবে। জীবনধারণ পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে আকৃতি ও প্রকৃতি ভিন্ন হয়েছে।

গ. নিষ্ক্রিয় অঙ্গসমূহ (Vestigeal Organs)

প্রচলিত ধারণায়,(যে সব অঙ্গ একসময় পূর্বপুরুষের দেহে সুগঠিত ও কার্যক্ষম ছিল, কিন্তু পরবর্তী বংশধরের দেহে গুরুত্বহীন, অগঠিত এবং অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে। মানবদেহে শতাধিক নিষ্ক্রিয় অঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেমন -

(i) চোখের ভেতরেরদিকের কোণায় উপপল্লব (nictitating membrane),

(ii) আক্কেল দাঁতসহ কয়েক ধরনের দাঁত;

(iii) গায়ের লোম;

(iv) বহিঃকর্ণের তিনটি করে কর্ণপেশি;

(v) লেজ না থাকলেও পুচ্ছাস্থি;

(vi) বৃহদান্ত্রের সাথে যুক্ত অ্যাপেন্ডিক্স ইত্যাদি ।

বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এদের সক্রিয় ভূমিকা এখনও দৃষ্ট হয়। গরু কান নাড়াতে পারে কিন্তু মানুষ তা পারে না। মানুষের লেজের কশেরুকাগুলো একত্রিত হয়ে ছোট অস্থি পিণ্ড বা কক্কিক্স হিসেবে মেরুদণ্ডের পশ্চাৎপ্রান্তে এখনও অবস্থান করছে। পরিবেশগত কারণে মানুষে এসব অঙ্গগুলো প্রয়োজনে না আসায় বিবর্তনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় অঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে।

Content added By